দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ অবসরে যাওয়ার আগের পাঁচ মাস দুদকের অনুসন্ধান থেকে কত জনকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে তার সংখ্যা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
কাউকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে কি না, হয়ে থাকলে কেন দেয়া হয়েছে, তাদের নাম ঠিকানাসহ তালিকা করে আগামী ১১ এপ্রিলের মধ্যে দাখিল করতে দুদককে বলা হয়েছে।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
দুদকে ‘অনুসন্ধান বাণিজ্য’ শিরোনামে গত ১৪ মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেয় আদালত।
একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদককে প্রতিবেদন-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ইকবাল মাহমুদ দুদকের চেয়ারম্যান পদ থেকে গত ১০ মার্চ অবসরে যান। তিনি ২০১৬ সালের ১০ মার্চ এই পদে যোগ দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া সরকারি সংস্থা সাধারণ বিমা করপোরেশনে ১০ বছর ধরে যে জালিয়াতি এবং ২৬ কোটি টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে সংস্থাটির অবস্থান কী, তাও জানতে চেয়েছে আদালত। বিমা কর্তৃপক্ষকেও লিখিতভাবে তা ১১ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে এ প্রতিবেদককেও তার প্রতিবেদন-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘১০ বছর ধরে জালিয়াতি, ২৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি নজরে আনার পর একই কোর্ট এ আদেশ দেয়।
দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন মঙ্গলবার আদালতের নজরে আনেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খুরশীদ আলম খান। পরে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে দুদকে ‘অনুসন্ধান বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ের আগে দুর্নীতির অনেক রাঘববোয়ালকে ছেড়ে দেন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তাদের দায়মুক্তি আড়াল করতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন কিছু নিরীহ ও দুর্বল ব্যক্তিকে। সব মিলিয়ে শেষ পাঁচ মাসে তিনি দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেন।
সূত্রটি জানায়, ইকবাল মাহমুদ বিদায় নেয়ার আগে স্বীয় কৃতকর্মের অনেক দালিলিক প্রমাণই যথাসম্ভব ‘নিশ্চিহ্ন’ করে যান। এরপরও এ প্রতিবেদকের হস্তগত হয় বেশকিছু নথি। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই শতাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
সূত্র মতে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলো সত্যিকারার্থে অনুসন্ধান হয়নি। হয়েছে অনুসন্ধান-বাণিজ্য। কথিত ‘নথিভুক্তি’ কিংবা ‘অনুসন্ধান পরিসমাপ্তির’ নেপথ্যে রয়েছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন।’
আর বিমা করপোরেশনের জালিয়াতি নিয়ে মঙ্গলবার প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খুলে রাষ্ট্রীয় সংস্থা সাধারন বিমা করপোরেশনের (এসবিসি) আয় থেকে ২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি চক্র। চক্রটির নেতৃত্ব দিয়েছেন এ সংস্থারই প্রধান কর্যালয়ে অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম। ১০ বছর ছয় মাস ধরে এ কাণ্ড ঘটে চললেও এসবিসি ছিল পুরোপুরি অন্ধকারে।